July 5, 2025

সিবিসি (CBC) টেস্ট কী এবং কেন করা হয়? আপনার রক্তের সম্পূর্ণ চিত্র।

সিবিসি (CBC) টেস্ট কী এবং কেন করা হয়?

সিবিসি বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (Complete Blood Count) টেস্ট হলো রক্তের একটি অত্যন্ত সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এটি স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে প্রায়শই করা হয় এবং বিভিন্ন শারীরিক অবস্থার প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে। এই একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে থাকা বিভিন্ন কোষের সংখ্যা, আকার এবং গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়, যা বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সিবিসি (CBC) টেস্ট কী?


সিবিসি টেস্ট হলো একটি রক্ত পরীক্ষা যা আপনার রক্তের তিনটি প্রধান কোষের প্রকার এবং তাদের উপাদান সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে:

  • লোহিত রক্তকণিকা (Red Blood Cells – RBC): এরা সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করে। সিবিসি টেস্ট এদের সংখ্যা, আকার এবং হিমোগ্লোবিনের (অক্সিজেন বহনকারী প্রোটিন) পরিমাণ পরিমাপ করে।
  • শ্বেত রক্তকণিকা (White Blood Cells – WBC): এরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সিবিসি টেস্ট শ্বেত রক্তকণিকার মোট সংখ্যা এবং বিভিন্ন প্রকারের শ্বেত রক্তকণিকার (যেমন – নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট, ইওসিনোফিল, বেসোফিল, মনোসাইট) সংখ্যা আলাদাভাবে পরিমাপ করে।
  • প্লেটলেট (Platelets – অণুচক্রিকা): এরা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং রক্তপাত বন্ধ করে। সিবিসি টেস্ট এদের সংখ্যা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

এছাড়াও, সিবিসি টেস্ট আরও কিছু পরিমাপ প্রদান করে, যেমন:

  • হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin – Hgb): লোহিত রক্তকণিকার অক্সিজেন বহনকারী প্রোটিনের পরিমাণ।
  • হেমাটোক্রিট (Hematocrit – Hct): রক্তে লোহিত রক্তকণিকার শতকরা পরিমাণ।
  • এমসিভি (Mean Corpuscular Volume – MCV), এমসিএইচ (Mean Corpuscular Hemoglobin – MCH), এমসিএইচসি (Mean Corpuscular Hemoglobin Concentration – MCHC), আরডিডাব্লিউ (Red Cell Distribution Width – RDW): লোহিত রক্তকণিকার আকার এবং হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব সম্পর্কিত তথ্য।

কেন সিবিসি টেস্ট করা হয়?


সিবিসি টেস্ট বিভিন্ন কারণে করা হয়ে থাকে। এটি শুধু রোগ নির্ণয়ের জন্যই নয়, বরং চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণেও ব্যবহৃত হয়:

১. সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Routine Health Check-up): এটি একটি রুটিন চেক-আপের অংশ হিসেবে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে অনেক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়ে, এমনকি যখন কোনো স্পষ্ট উপসর্গ থাকে না।

২. রোগ নির্ণয় (Diagnosing Illnesses):

  • রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া (Anemia): হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে গেলে অ্যানিমিয়া নির্দেশ করে।
  • সংক্রমণ (Infections): শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাল বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়।
  • প্রদাহ (Inflammation): শরীরের কোনো অংশে প্রদাহ থাকলে শ্বেত রক্তকণিকার নির্দিষ্ট কিছু উপাদানের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
  • রক্তপাত জনিত সমস্যা (Bleeding Disorders): প্লেটলেটের সংখ্যা অস্বাভাবিক হলে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা থাকতে পারে।
  • ক্যান্সার (Cancers): লিউকেমিয়া (Leukemia) বা লিম্ফোমা (Lymphoma)-এর মতো রক্তের ক্যান্সার নির্ণয়ে সিবিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ (Monitoring Treatment Effectiveness): কোনো রোগের চিকিৎসার সময় ঔষধ বা পদ্ধতির কার্যকারিতা নিরীক্ষণের জন্য নিয়মিত সিবিসি টেস্ট করা হয়। যেমন, কেমোথেরাপি গ্রহণকারী রোগীদের রক্তের কোষের সংখ্যা পর্যবেক্ষণে সিবিসি অপরিহার্য।

৪. পূর্বের রোগ বা চিকিৎসার প্রভাব মূল্যায়ন (Evaluating Previous Conditions/Treatments): পূর্বে কোনো রোগের চিকিৎসা হয়েছে বা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে সিবিসি টেস্ট তার প্রভাব মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।

৫. অস্ত্রোপচারের আগে (Before Surgery): কোনো বড় অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর রক্তের অবস্থা জানার জন্য সিবিসি টেস্ট করা হয়, যাতে সম্ভাব্য রক্তপাত বা সংক্রমণের ঝুঁকি বোঝা যায়।

সিবিসি টেস্টের ফলাফল বিশ্লেষণ

  • সিবিসি টেস্টের ফলাফল একটি নির্দিষ্ট রেফারেন্স রেঞ্জের সাথে তুলনা করে বিশ্লেষণ করা হয়। রেফারেন্স রেঞ্জের বাইরে কোনো মান থাকলে তা অস্বাভাবিক ধরা হয় এবং আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
  • কম লোহিত রক্তকণিকা/হিমোগ্লোবিন: অ্যানিমিয়া, রক্তপাত, পুষ্টির অভাব (যেমন আয়রন, ভিটামিন বি১২, ফোলেট)।
  • বেশি লোহিত রক্তকণিকা/হিমোগ্লোবিন: ডিহাইড্রেশন, ধূমপান, ফুসফুসের রোগ।
  • কম শ্বেত রক্তকণিকা: অস্থিমজ্জার সমস্যা, ভাইরাস সংক্রমণ, কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অটোইমিউন রোগ।
  • বেশি শ্বেত রক্তকণিকা: সংক্রমণ, প্রদাহ, মানসিক চাপ, লিউকেমিয়া।
  • কম প্লেটলেট: ডেঙ্গু, অস্থিমজ্জার সমস্যা, কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অটোইমিউন রোগ, গুরুতর সংক্রমণ।
  • বেশি প্লেটলেট: প্রদাহ, সংক্রমণ, ক্যান্সার, অস্ত্রোপচারের পর।

সিবিসি টেস্ট একটি অত্যন্ত কার্যকরী ডায়াগনস্টিক টুল যা চিকিৎসকদের রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করতে, চিকিৎসার অগ্রগতি নিরীক্ষণ করতে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করে। যদিও এই পরীক্ষাটি সাধারণ, এর ফলাফল বিশ্লেষণ এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য একজন যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। আপনার চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া কোনো স্বাস্থ্যগত সিদ্ধান্ত নেবেন না।

ডিসক্লেইমার (Disclaimer):
এই ব্লগ পোস্টে প্রকাশিত সমস্ত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে। আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা বা অসুস্থতার জন্য দয়া করে একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Fit Brightly ব্লগ কর্তৃপক্ষ এই সাইটে উপস্থাপিত কোনো তথ্য, পরামর্শ বা চিকিৎসার ফলাফলের জন্য দায়ী থাকবে না।
লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুনঃ
Fit Brightlu Icon

Fit Brightly

ফিট ব্রাইটলি-তে আপনাকে স্বাগতম! আমরা একটি আধুনিক বাংলা স্বাস্থ্য ব্লগ, যার মূল লক্ষ্য আপনাকে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ও টিপস প্রদান করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *